চট্টগ্রামে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

Passenger Voice    |    ১১:০৮ এএম, ২০২০-০৭-০১


চট্টগ্রামে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

টিকিট কালোবাজারি, ট্রেনের তেল বা মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি, টেন্ডার কিংবা নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সে সঙ্গে আছে রেলওয়ের জমি দখল করে বিক্রি অথবা নিজ ক্ষমতাবলে দোকান নির্মাণের অভিযোগও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা কিংবা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে মাত্র কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব অপকর্ম করে বেড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না রেল কর্মকর্তারা। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে-তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এমনটায় জানিয়েছে দৈনিক যুগান্তর।

গত ২৭ জুন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী সেল ডিপোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী (স্টোর) মো. ইউনুসের সহায়তায় অবৈধভাবে রেলের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম পাচারকালে ৪ জনকে আটক করে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে নিজ ক্ষমতাবলে মুচলেকা নিয়ে এক আসামিকে ছেড়ে দেয় রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান পরিদর্শক ইসরাফিল মৃধা। গ্রেফতার অপর তিনজনসহ রেল কর্মকর্তা মো. ইউনুসকে আসামি করে মামলা দায়ের করে আরএনবি। গ্রেফতার তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ইউনুসকে গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট দফতরে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে আরএনবি। কিন্তু এখনও পাহাড়তলীর সেল ডিপোয় বহাল আছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (স্টোর) মো. ইউনুস। নিজ ক্ষমতাবলে এক আসামিকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় আরএনবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান পরিদর্শক ইসরাফিল মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আরএনবি সহকারী কমান্ড্যান্ট সত্যজিৎ দাশ বলেন, ‘নিজ ক্ষমতাবলে আসামি ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় আরএনবির প্রধান পরিদর্শক ইসরাফিল মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কারখানা শাখার চিফ ইন্সপেক্টর রেজওয়ানুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চুরি এবং আসামি ছেড়ে দেয়ার ঘটনা তদন্ত হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ‘চুরিতে সহায়তার অভিযোগে সেল ডিপোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী (স্টোর) মো. ইউনুসকে গ্রেফতারের অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে ইউনুসকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি।’

এদিকে গত ১৩ জুন চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের প্লাটফরম থেকে ৮টি আসনের ২টি ট্রেনের টিকিট এবং টিকিট বিক্রির ২ হাজার ২৫০ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় আরেফিন আহমেদ (২৮) নামে এক রেলওয়ে কর্মচারীকে। গ্রেফতার আরেফিন আহমেদ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত।

রেলওয়ে থানার ওসি মো. মোস্তাফিজ ভূঁইয়া বলেন, ‘স্টেশন এলাকায় কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রির সময় হাতেনাতে আরেফিন আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, তিনি রেলওয়ের কর্মচারী। পাহাড়তলী কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট দফতরকে অবহিত করেছি। বর্তমানে আরেফিন আহমেদ কারাগারে রয়েছেন।’

এর আগে চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অলি উল্লাহ সুমন নামে এক রেলওয়ে কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় তিনি গ্রেফতারও হন। অলি উল্লাহ সুমন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার কার্যালয়ে সহকারী পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন।

দুদক সূত্র জানায়, ‘প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, মিজানুর রহমান সুমন নামে এক ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার নামে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন ব্যাংক ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অপরাধে রেলওয়ের কর্মচারী অলি উল্লাহ সুমনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়। তিনি ২০০৫ সালের ১৬ জানুয়ারি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতরে পিয়ন হিসেবে যোগদান করে।

চট্টগ্রামে বেশিরভাগ রেলওয়ের জমি বেদখল হয়ে গেছে। দখলদারদের মধ্যে বেশিরভাগই রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী। আবার কোথাও কোথাও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কিংবা সন্ত্রাসীদের সহায়তায় যৌথভাবে জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। রেলওয়ের দখলকৃত জমিতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দোকানপাট, বহুতল ভবন, মৎস্য খামার। অধিকাংশ দখলদারের বিষয়ে নীরব রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রেলের ডিপো থেকে তেল চুরি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মে কতিপয় রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে বলে রেলওয়ের অফিসপাড়ায় প্রচার আছে।